ইংরেজী নামঃ Aonla
বৈজ্ঞানিক নামঃ Phyllanthus emblica
পরিবারঃ Euphorbiaceae
পরিচিতিঃ মধ্যম থেকে বৃহৎ আকৃতির বৃক্ষ, উচ্চতায় ২০ মিটারের অধিক হয়ে থাকে। পাতা পক্ষল, যৌগিক, বোটার দুইপাশে চিরুনির দাঁতের মত সাজানো থাকে। শীতকালে পাতা ঝরে। ফুল ক্ষুদ্রাকার, সহবাসী অর্থাৎ স্ত্রী ও পুরুষ ফুল একই গাছে আলাদাভাবে উৎপন্ন হয়। ফল গোলাকৃতি, মাংসল ও রসালো এবং ভিতরে বড় আটি থাকে।
পুষ্টিগুণঃ প্রচুর ভিটামিন-সি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল।
ঔষধিগুণঃ আমলকির রস যকৃত, পেটের পীড়া, হাঁপানি, কাশি, বহুমূত্র, অজীর্ণ ও জ্বর নিরাময়ে বিশেষ উপকারী। এর পাতার রস আমাশয় প্রতিষেধক ও বলকারক। আমলকির রসের সরবত জন্ডিস, বদহজম ও কাশির হিতকর। হাঁপানি, কাশি, বহুমূত্র ও জ্বর নিরাময়ে এর বীজ ব্যবহার করা হয়।
জমি নির্বাচনঃ আমলকি একটি কষ্টসহিষ্ণু উদ্ভিদ। তাই প্রায় সব ধরনের মাটিতে আমলকির চাষ করা যায়, তবে তা সুনিষ্কাশিত হলে ভাল হয়।
জমি তৈরীঃ বাগান আকারে চাষ করতে হলে নির্বাচিত জমি ভাল করে চাষ ও মই দিয়ে সমতল এবং আগাছামুক্ত করতে হবে।
বংশবিস্তারঃ সাধারনত বীজ দিয়ে বংশবিস্তার করা হয়ে থাকে।
রোপণ পদ্ধতিঃ সমতল ভূমিতে চারা সাধারনত: বর্গাকার বা আয়তাকার কিংবা ত্রিভূজাকার প্রনালীতে লাগানো যেতে পারে। উঁচু নীচু পাহাড়ী এলাকায় কন্টুর রোপণ প্রনালী অবলম্বন করা যায়।
চারা রোপণের সময়ঃ বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য জুন) মাস গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য আগষ্ট-মধ্য অক্টোবর) মাসেও গাছ লাগানো যায়। কিন্তু অতিরিক্ত বর্ষায় চারা রোপণ না করাই ভাল।
চারা রোপণের দূরত্বঃ ৮ মিটার।
গর্ত তৈরীঃ গর্তের আকার ১মি. x ১মি. x ১মি.।
প্রতি গর্তে সারের পরিমাণঃ
সারের নাম | পরিমাণ |
জৈব সার | ১৫-২০ কেজি |
টিএসপি | ৫০০ গ্রাম |
এমপি | ২৫০ গ্রাম |
চারা রোপণঃ গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে চারা সোজাভাবে লাগিয়ে মাটি দিয়ে এর চারদিকে চেপে দিতে হবে এবং লাগানোর পরপরই পানি দিতে হবে। প্রতি ১-২ দিন অন্তর পানি দিতে হবে। প্রয়োজনবোধে বাশের খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সার প্রয়োগঃ পূর্ন বয়স্ক গাছে প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে ১০০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। উলেখিত সার গাছের গোড়া থেকে ১ মিটার দূরে যতটুকু জায়গায় দুপুর বেলা ছায়া পড়ে ততটুকু জায়গায় ছিটিয়ে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ সার প্রয়োগের পরপরই পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। খরা বা শুকনো মৌসুমে পানি সেচ দিলে ভাল হয়।
ডাল ছাটাইকরনঃ গাছের মরা, রোগাক্রান্ত ও দূর্বল ডালপালা কেটে পরিস্কার করতে হবে।
রোগ বালাই ও প্রতিকারঃ
রোগের নাম | লক্ষণ | প্রতিকার |
মরচে রোগ | ১) পাতা ও ফলে মরচে দাগ পড়ে। | ১) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। |
অনিষ্টকারী পোকা মাকড় ও দমন ব্যবস্থাঃ
পোকার নাম | ক্ষতির ধরন | প্রতিকার |
কান্ডের কুরনি পোকা | ১) কান্ডের ছাল কুরে খায়। | ১) ধারালো দা বা ছুরি দিয়ে চেঁছে আলকাতরা বা বর্দোপেষ্ট লাগাতে হবে। |
ফল সংগ্রহঃ মধ্য চৈত্র-মধ্য জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল -মে) মাসে ফুল ধরে এবং শীতকালে ফল পাকে। প্রতিটি পূর্ন বয়স্ক গাছ থেকে ১৫০-২০০ কেজি ফল পাওয়া যায়।