সারঃ মাটিতে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ যে সকল দ্রব্য প্রয়োগ করা হয় তাকে সার বলে। সহজ কথায় বলা যায়, উদ্ভিদ/ ফসলের জন্য কোন পুষ্টি উপাদান মাটিতে ঘাটতি হলে তা পূরণের জন্য যে সকল দ্রব্য প্রয়োগ করা হয় তাই সার।
সারের প্রকারভেদঃ সারকে সাধারণ নিম্নলিখিত ৪টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়-
১) জৈব সারঃ জীব দেহ থেকে প্রাপ্ত সারকে জৈব সার বলে। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ ও প্রাণীর পঁচনশীল অংশ পঁচে যে সার তৈরী করা হয় তাকে জৈব সার বলে। যেমন- গোবর, মুরগীর বিষ্ঠা, কম্পোস্ট, খামারজাত সার, সবুজ সার (ধৈঞ্চা), হাড়ের গুড়া, মাছের গুড়া ইত্যাদি।
২) রাসায়নিক সারঃ যে সকল সার কৃত্রিম উপায়ে কল কারখানায় প্রস্তুত করা হয় বা প্রাকৃতিক খনি থেকে উত্তোলন করা হয় তাকে রাসায়নিক সার বলে। যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, জিংক সালফেট, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, মিউরেট অব পটাশ, পটাশিয়াম সালফেট ইত্যাদি।
৩) মিশ্র/যৌগিক সারঃ দুই অথবা ততোধিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ কারখানায় উৎপাদিত রাসায়নিক সারকে মিশ্র/যৌগিক সার বলে। যেমন- এনপিকেএস (মিশ্র) সার।
৪) জীবাণু সারঃ জীবাণু যখন সার হিসাবে ব্যবহৃত হয় তাকে জীবাণু সার বলে। অর্থাৎ যে সারে অণুজীব সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং যা ব্যবহারে উপযুক্ত পরিবেশে অণুজীবের কার্যাবলী বৃদ্ধিসহ মাটি বা উদ্ভিদের শিকড়ে পুষ্টি উপাদানের যোগান বাড়ায় তাকে অণুজীব সার বলে। যেমন- রাইজোবিয়াম জীবাণু সার ছোলায় ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না কারণ রাইজোবিয়াম জীবাণু বাতাস থেকে গাছের শিকরে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে উহা সরবরাহ করে।
সুষম সার প্রয়োগঃ ফসলের চাহিদানুযায়ী সকল খাদ্যোপাদান সারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করাকেই সুষম সার প্রয়োগ বলে। অনেক কৃষক কেবল ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে। এ অবস্থা মোটেই কাম্য নয়। সুষম সার প্রয়োগ করলে প্রতিটি উপাদানের একক ও সমন্বিত প্রভাবে ফসলের ফলন ও মান বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে মাটিরও ব্যবস্থাপনা হয়। সুষম সার প্রয়োগের মাত্রা নিম্নলিখিত উপাদান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত-
১) ফসলের চাহিদার পরিমাণ ও সময়।
২) মাটিতে খাদ্যোপাদানের উপস্থিতি
৩) প্রয়োগকৃত সারের অপচয় (উদ্বায়ন, চুয়ানী, আবদ্ধ প্রভৃতি কারণে)
৪) ইতোপূর্বে চাষকৃত ফসলে দেয় সারের অবশিষ্ট প্রভাব (K ও P’র জন্য)
৫) ইতোপূর্বে আবাদকৃত ফসলের প্রভাব (লিগিউম ফসলে বায়বীয় N যোগ হওয়া ও অন্যান্য ফসলের বেলায় অবশিষ্টাংশের প্রভাব)
৬) চাষের উদ্দেশ্য (বীজ/আঁশ/পাতা উৎপাদন প্রভৃতি)
৭) বর্ষায় পলি মাটি জমা হওয়ার সুযোগ ও পরিমাণ।
৮) শস্যকরণ পদ্ধতি।
৯) সেচসহ/বৃষ্টিনির্ভর চাষ পদ্ধতি।
১০) ফলনের লক্ষমাত্রা প্রভৃতি।