
রসুন একটি অর্থকরী মসলা ফসল ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্য। প্রতিদিনের রান্নায় ইহা আমরা ব্যবহার করে থাকি। এ ছাড়াও রসুনে অনেক ঔষধি গুন রয়েছে যাহা কলেস্টেরল কমায়, ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে রাখে। দেশের চাহিদার তুলনায় এ ফসলের উৎপাদন নিতান্তই কম। উৎপাদন কম হওয়ার জন্য রোগবালাই একটি প্রধান কারণ। রসুনে পার্পল ব্লচ, কাল পচন, ভাইরাস, গুদামজাত ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। এই রোগসমূহ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। তাই রসুনের কয়েকটি মারাত্মক রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
১। রোগের নাম : পার্পল ব্লচ বা ব্লাইট (Purple Blotch)।
রোগের কারণ : অলটারনারিয়া পোরি (Alternaria porri) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : আক্রান্ত বীজ, বায়ু ও গাছের পরিত্যক্ত অংশের মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। বৃষ্টিপাত হলে এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
রোগের লক্ষণ :
– প্রথমে গাছের পাতায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি ভেজা বাদামী বা হলুদ রং এর দাগের সৃষ্টি হয়।
– দাগগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বড় দাগে পরিনত হয়।
– দাগের মধ্যস্থান প্রথমে লালচে-বাদামী এবং পরে কালো বর্ণ ধারণ করে। এছাড়াও দাগের কিনারা বেগুনী বর্ণ ধারণ করে।
– আক্রান্ত পাতা উপরের দিক হতে ক্রমান্বয়ে মরে যেতে থাকে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত পাতা ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে হলদে হয়ে মরে যায়।
– এ রোগের আক্রমনের ফলে রসুন অপুষ্ট হয় এবং ফলন হ্রাস পায়।

রোগের প্রতিকার :
– সুস্থ ও নীরোগ জমি থেকে বীজ রসুন সংগ্রহ করতে হবে।
– রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে।
– আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
– নভেম্বর মাসের ১-১৫ তারিখের মধ্যে কন্দ রোপণ করতে হবে।
– প্রোভেক্স বা রুভরাল ছত্রাকনাশক প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপণ করতে হবে।
– জমিতে রোগ দেখা দিলে রুভরাল প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ও রিডোমিল গোল্ড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর পর্যায়ক্রমে ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
২। রোগের নাম : কালো পচন (Black mold of Garlic)।
রোগের কারণ : এসপারজিলাস নাইজার (Aspergillus niger) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : আক্রান্ত বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
রোগের লক্ষণ :
– কালো পঁচা রোগ হলে রসুনের খোসার উপরে কালো পাউডারের মতো স্পোর দেখতে পাওয়া যাবে।
– কালো রং এর স্পোর গুলো মাঝে মাঝে ভিতরেও দেখতে পাওয়া যায়।

রোগের প্রতিকার :
– রসুন তোলার পর রসুন জমিতে কমপক্ষে দুইদিন শুকাতে হবে।
– রোদে শুকানোর পর রসুন কন্দগুলো সংরক্ষণের পূর্বে ১০-১৫ দিন ছায়ায় রেখে দিতে হবে।
– রসুনের সুস্থ কন্দ সংরক্ষণ করতে হবে।
– সংরক্ষনাগারে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
– সংরক্ষণের স্থানটি পরিস্কার ও স্বাস্থ্য সম্মত হতে হবে।
– মাঝে মাঝে রোগাক্রান্ত কন্দ বেছে বাদ দিতে হবে।
– ফসল সংগ্রহের ১০-১৫ দিন পূর্বে রসুন গাছে ব্যভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৩। রোগের নাম : রসুনের মোজাইক রোগ (Garlic Mosaic)।
রোগের কারণ : ভাইরাস (Potty Virus)।
রোগের বিস্তার : বাহক পোকা (এফিড)-এর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
রোগের লক্ষণ :
– রসুনের পাতায় নানা বর্ণের ফুটফুটে ক্লোরোটিক ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়।
– বয়স্ক পাতা হতে নতুন পাতায় বেশি পরিমাণে দাগ পরিলক্ষিত হয়।
– রসুনের আক্রান্ত গাছ স্টান্টেড হয়ে যায় ও আকার ছোট হয়।
রোগের প্রতিকার :
– রোগমুক্ত জমি হতে বীজ রসুন সংগ্রহ করতে হবে।
– রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে ফেলতে হবে।
– বানিজ্যিকভাবে রসুন উৎপাদনের জন্য সেরিস্টেম টিপ কালচারের মাধ্যমে ভাইরাস মুক্ত রসুনের ব্যবহার করতে হবে।
– এফিড দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন জাতীয় বালাইনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৪। রোগের নাম : রসুনের স্প্লিটিং (Garlic splitting)।
রোগের কারণ : শারীরবৃত্তীয় (Physiological disorder) কারণ। যদি ফসলে অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয় এবং সংগ্রহের পূর্বে বৃষ্টিপাত হয় বা সেচ দেয়া হয় তাহলে রোগটি বেশী হয়।
রোগের লক্ষণ : রসুনের কোয়াগুলি আলাদা হয়ে অংকুরোদগমের মাধ্যমে নতুন গাছের জন্ম হয়।

রোগের প্রতিকার :
– পরিমিত মাত্রায় নাইট্রোজেন জাতীয় সার ব্যবহার করতে হবে।
– ফসল তোলার কমপক্ষে ১ মাস আগে সেচ বন্ধ করতে হবে।