উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানঃ উদ্ভিদের বেঁচে থাকা, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া এবং বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে ফুল, ফল এবং বীজ উৎপাদনের জন্য খাদ্যগ্রহণ আবশ্যক। অংকুরোদগম ও কচি অবস্থায় বীজে সঞ্চিত খাদ্য থেকে সরবরাহ পেলেও পরবর্তীতে তাকে খাদ্যের জন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়। উদ্ভিদ মাটিতে থাকা ৯০ টি বা ততোধিক উপাদান গ্রহণ করে থাকে। তবে এগুলোর মধ্যে গুটি কয়েক উপাদান উদ্ভিদের জন্য অত্যাবশক কারণ ঐগুলো উদ্ভিদের বিপাক ক্রিয়ায় ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।
খাদ্যোপাদান প্রাপ্তির উৎসঃ উদ্ভিদ বৃদ্ধি ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদানসমূহ তিনটি প্রাকৃতিক উৎস অর্থাৎ মাটি, পানি ও বায়ু থেকে পরিশোষণ করে। এভাবে উদ্ভিদ কর্তৃক পরিশোষিত হওয়া, ভূমি ক্ষয়, চুয়ানীজনিত ক্ষতি, অবৈজ্ঞানিক ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য নানাবিধ কারণে ভূমির উর্বরতা শক্তি দিন দিন কমে যায়। এমতাবস্থায় প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদানসমূহ কৃত্রিম ভাবে প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে। তাই কাংখিত ফসল পাওয়ার জন্য জমিতে পরিমাণমত সার দিতে হয়।
অত্যাবশকীয় খাদ্যোপাদানঃ উদ্ভিদের বেঁচে থাকা, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া এবং বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে ফুল, ফল এবং বীজ উৎপাদনের জন্য যে সমস্ত মৌলিক উপাদান অপরিহার্য, তাদেরকেই উদ্ভিদের অত্যাবশ্যক খাদ্যোপাদান বলে। এর সংখ্যা ১৬ টি। এদের যে কোন উপাদানের পূর্ন অভাব হলে উদ্ভিদ মারা যাবে এবং ঘাটতি হলে আনুপাতিক হারে উদ্ভিদের দেহ ক্রিয়ায় কোথাও না কোথাও ব্যাঘাত ঘটবে, যা সুনির্দিষ্ট লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে।
উদ্ভিদ অত্যাবশ্যক খাদ্যোপাদানের কিছু সংখ্যক বেশী এবং কিছু সংখ্যক কম পরিমাণে পরিশোষণ করে। তাই পরিশোষণের পরিমাণের ভিত্তিতে খাদ্যোপাদান নিম্নলিখিত দু প্রকার-
১) মূখ্য খাদ্যোপাদান – এ সমস্ত খাদ্যোপাদান উদ্ভিদের পুষ্টির জন্য বেশী পরিমাণে প্রয়োজন। মূখ্য উপাদান ৯ টি, যথাÑ কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ, সালফার, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম।
২) গৌণ খাদ্যোপাদান – এ সমস্ত খাদ্যোপাদান উদ্ভিদের পুষ্টির জন্য কম পরিমাণে প্রয়োজন। গৌণ উপাদান ৭ টি, কপার, জিংক, বোরন, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম ও ক্লোরিন।
মূখ্য ও গৌণ খাদ্যোপাদানের মধ্যে পার্থক্যঃ | |
মূখ্য খাদ্যোপাদান | গৌণ খাদ্যোপাদান |
১) বেশী পরিমাণে পরিশোষিত হয় ২) মাটিতে ঘাটতি বেশী হয় ৩) ঘাটতির লক্ষণ সাধারণত: পুরাতন পাতায় দেখা দেয় ৪) সার হিসেবে বেশী হারে প্রয়োগ করা হয় ৫) প্রয়োগ মাত্রা একটু বেশী হলে তেমন ক্ষতি হয় না ৬) মোট চাহিদার অংশবিশেষ তরল আকারে পাতায় গ্রয়োগ করে মেটানো যেতে পারে | ১) কম পরিমাণে পরিশোষিত হয় ২) ঘাটতি কম দেখা যায় ৩) সাধারণত: নতুন পাতায় দেখা যায় ৪) কম হারে প্রয়োগ করা হয় ৫) সামান্য বেশী প্রয়োগ করলেই ব্যাপক ক্ষতির লক্ষণ প্রকাশ পায় ৬) পূর্ণ অংশই এভাবে মেটানো যেতে পারে |
খাদ্যোপাদানের ভূমিকাঃ নিম্নলিখিত এক বা একাধিক উপায়ে খাদ্যোপাদানসমূহ উদ্ভিদ পুষ্টিতে ভূমিকা রাখে-
১) উদ্ভিদকোষের উপাদান হিসেবে থাকে।
২) দেহতাত্বিক নানা বিক্রিয়ায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
৩) উদ্ভিদ দেহে জারন-বিজারনের কাজ করে।
৪) উদ্ভিদ দেহে অম্লতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
৫) অভিস্রবন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
৬) মূলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে উদ্ভিদের সার্বিক বৃদ্ধিকে সহায়তা করে
উপরন্তু এ সকল কাজের সমন্বিত প্রভাবে ফসলের ফলন ও মান বৃদ্ধি করে।