ইংরেজী নামঃ Calotropis
বৈজ্ঞানিক নামঃ Calotropis gigantean
পরিবারঃ Asclepiadaceae
পরিচিতিঃ আকন্দ একটি মাঝারি আকৃতির গুল্ম জাতীয় গাছ। কান্ড কিছুটা শক্ত, কচি ডাল পশমময়। লম্বাকৃতি, অনেকটা কাঁঠাল পাতার মতো দেখায়। পাতার আকারের চেয়ে বোঁটা খুবই ছোট হয়। পুষ্পদন্ড বহু শাখাবিশিষ্ট এবং থোকার আকারে বহু ফুল ফোটে। ফুলের রং ফিকে বেগুনী। ফল ডিম্বাকৃতি এবং পশমময়। এ গাছ সাধারনত: তিন ধরনের হয়ে থাকে।
ক) বড় গাছঃ ফুল শ্বেতবর্ণ, বড় বড় পাতা এবং তা থেকে বেশি পরিমাণে আঠা বের হয়।
খ) ছোট গাছঃ ছোট ছোট পাতা হয়। ফুল সাদা এবং বেশ সুন্দর দেখায়।
গ) খুবই ছোট আকৃতির গাছঃ ফিকে পীত আভাযুক্ত সবুজ বর্ণের ফুল হয়। এ শ্রেনীর গাছ থেকে অনেক বেশি পরিমাণে আঠা বের হয়।
ঔষধি ব্যবহারঃ
১) ৩ গ্রাম হলুদের গুঁড়ো এবং আকন্দের ৫-৬ ফোঁটা আঠা মিশিয়ে গোসলের এক ঘন্টা আগে লাগালে ছুলি এবং মেচেতা রোগের উপকার হবে।
২) ১৬ ফোঁটা আকন্দের আঠা, সমপরিমাণ তিল-তেল এবং এক ফোটা হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে মলম তৈরী করে রাতে ঘুমানোর আগে মাত্র একবার লাগালে নিশ্চিত সেরে যাবে।
৩) যে কোন কারণে দেহের কোন অংগ ফুলে গেলে সে স্থানে প্রথমে আকন্দ পাতা দিয়ে ঢেকে তারপর কাপড়ে জড়িয়ে বেঁধে রাখলে ফোলা কমে যায়।
৪) বিছে কামড়ালে প্রথমে ধারালো ব্লেড বা ছুরি দ্বারা বিছের হুল বের করে নিতে হবে। এরপর সে জায়গায় আকন্দের আঠার প্রলেপ দিলে নিশ্চিত উপশম হবে।
৫) কানের যন্ত্রনার ক্ষেত্রে আকন্দ পাতায় পুরনো গাওয়া ঘি মাখিয়ে সে পাতাকে আগুনে ভালভাবে সেঁকে নিয়ে পাতাকে নিংড়ে কানে দিয়ে তুলা দ্বারা কান বন্ধ করে রাখতে হবে। এভাবে মাত্র দুদিন প্রয়োগ করলেই যন্ত্রণার উপশম হবে।
৬) আকন্দ গাছের আঠায় সামান্য সরষে তেল মিশিয়ে মালিশ করলে বাতের ফুলা বা যন্ত্রণা দুটোই কমে যাবে।
৭) অজীর্ণে আকন্দের ফুলকে রোদে ভালভাবে শুকিয়ে তারপর গুঁড়ো করে প্রত্যহ দুপুরে ভাত খাওয়ার পর এক চামচ করে খেতে হবে। ঠান্ডা, কাশিতে ১ চামচ করে সকাল-সন্ধ্যায় মোট দু’বার খাওয়া দরকার।
৮) আকন্দ গাছের মূলের ছালকে ভালভাবে বেটে প্রলেপ দিলে গোদ রোগে আরাম বোধ হয়।
৯) পশুপাখীর ক্ষেত্রেঃ গরুর গলা ফুলা রোগে আকন্দ পাতা গরম করে অথবা আকন্দ পাতার সাথে অন্যান্য উপাদান পিষিয়ে আস্তরণ তৈরি করে গরুর গলায় ফুলে যাওয়া স্থানে লাগালে উপকার হয়।
জমি নির্বাচনঃ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই জন্মায়।
জমি তৈরিঃ জমি ভালভাবে চাষ দিয়ে আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। বীজ বপণ বা চারা রোপণের পূর্বে বীজতলার মাটি বা গর্তের মাটির সাথে জৈব সার ৩ঃ১ অনুপাতে মিশাতে হবে।
বংশ বৃদ্ধিঃ বীজ হতে বংশবৃদ্ধি করে।
বীজ বপণ/চারা রোপণঃ ফল পাকলে ফেটে যায় এবং বীজ বের হয়ে যায়। তখন বীজ সংগ্রহ করে মাটিতে বুনলেই চারা হয়।
পরিচর্যাঃ
১) আগাছা পরিস্কার করতে হবে।
২) শুস্ক মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) গাছে সার না দিলেও চলে। তবে প্রতি বছর ১৫-২০ কেজি জৈব সার দুই কিস্তিতে – ১ম কিস্তি মধ্য ফাল্গুন-মধ্য বৈশাখ (মার্চ-এপ্রিল) মাসে এবং দ্বিতীয় কিস্তি মধ্য আশ্বিন-মধ্য অগ্রহায়ন (অক্টোবর-নভেম্বর) মাসে প্রয়োগ করলে ভাল হয়। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে জৈব সারের পরিমাণ ১০% বৃদ্ধি করতে হবে।
ফুল আসার সময়ঃ মাঘ-চৈত্র (মধ্য জানুয়ারি-মধ্য এপ্রিল)।
ফল ধরার সময়ঃ বৈশাখ-শ্রাবণ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য আগষ্ট)।